বলা কথা Read Count : 66

Category : Diary/Journal

Sub Category : N/A
সরফরাজের আজ মন ভালো নেই। না থাকার কথা! কবে যে আকাশের বুকে হাকালুকির উপরে পানকৌড়ি উড়তে দেখেছিলো তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে পড়ে যে একঝাক মেঘমালার আবরণে, বিষাদ মনে পানকৌড়ি গুলো হারিয়ে গিয়েছিলো । তাই আজ সে গগণটিলায় বসে বসে জলের গান শুনতেছে। ব্যান্ডদলটির গানে প্রাণ আছে। কেনোনা, শাহ্ আবদুল করীম তো বলেছে- " গানে মিলে প্রানের সন্ধান.........আমি তো গান গাইতে জানি না "। অথচ তাহার সৃষ্টিসুখে আজো মানুষ ঠিকই প্রাণের সন্ধান পেয়ে যাচ্ছে। আর এজন্যই শাহ্ করীম মানবমনে স্হান পেয়ে শ্রদ্ধার আসনে বসে আছেন। 

হঠাৎ পানকৌড়ির কথা স্বরণ হবার কারণ সন্ধানে সরফরাজের মন উতলা হয়ে উটলো। কিছু যেনো মাথায় ঢুকতেছে না। এটা কি গগণটিলার উপরে মেঘমালা দেখতে পেয়ে নাকি একঝাঁক পাখি দেখতে পেয়ে। তবে এটুকু বোধ জাগ্রত হলো প্রাণে যে, প্রকৃতিকে কাছে পেলে মনটা হালকা হয়। হউক না তা গগণটিলা কিংবা হাকালুকি হাওর।আর ঠিক এসময় গেয়ে উটলো মোবাইলে সেই গানটা " দুরে থাকা মেঘ তুই দুরে দুরে থাক, ফাগুণের হাওয়া এলে সামলে রাখ "।এবার মনটা কেনো যে, আরো বিষাদময়কে আঁকড়ে ধরে যেনো বিষাদসিন্ধু হয়ে গেলো। আহা রে ফাগুন!  তকে পেলে তো জেগে উটে কৃষ্ণচুড়া। যেনো গাছটা সাপের মণি মাথায় নিয়ে বসে আছে । আর তারি দৌলতে গাজিপুরের মণ্ডবটা ও যেনো এক রক্তিমাভা নিয়ে আপন মহিমায়  স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তুুক এখন তো ফাগুন না রে মন। তবে কেনো এতো ফাগুনের জন্য উতলা হয়ে উটলে! আসলে মন কখন উতলা হয়ে তবলা বাজায় বুঝা মুশকিল!

ফুল ভলিউম দিয়ে গান শুনতেছিলো তবে এবার ফুল ভলিউম যেনো ফুলষ্টপ হয়ে যাচ্ছে মনে হলো সরফরাজের। তাই সর্পরাজের মতো ফুঁসে উটলো সরফরাজের মন। তবে বেশি ফুঁসতে পারলো না সে। তার পুর্বেই আচমকা এক ফুঁ এসে যেনো কানের বারোটা বাজিয়ে দিলো। অমুকের আর্শিবাদ নির্বাচনী ফাঁদ।মার্কা যে কলাগাছ,যদি তুই কলা খাস
এখন দে ভোট,না হয় ফুট
আমরা আছি কিসের জন্য,দখলদারী হয়ে হবো ধন্য।

দুর ছাঁই আর ভাল্লাগে না!আসলে যাহারা অকাজের কাজ্বী তারা তো এমন করবেই। এইসব ছাঁই-পাশ দেখতে কার ভালো লাগে মন তুই বল? তাই তো অমনোযোগী ছাত্রের মতো এসবে মনযোগ দিতে  পারে না সে। তবে অমনোযোগী ছাত্র/ছাত্রীই যে একসময় শাইন করে তা এবার বুঝতে পারলো সর্পরাজ।  মনে মনে শান্ত হবার চেষ্টা করছে সর্পরাজ। একটু যখন শান্তনার অভয়বাণী ভিতর পেলো তখন যেনো মাথাটা প্রতিযোগিতা শুরু করে দিলো। আর তখনি মনে হলো যে,একটি গানের ভিতরে যে দর্শন থাকে তা কি কেউ দেখে! তবে যাহারা খুঁজে তাহারা হয়তো পেয়ে যায় নিশ্চয়ই।

এই যে জলের গানের " ফাগুনের হাওয়া এলে সামলে রাখ" এখন তো ফাগুন নেই ঠিকই। তবে ফাগুনের আগুন তো ঠিকই দেখা যাবে মাঠে-ময়দানে। তবে তা মণ্ডবের সেই কৃষ্ণচুড়ায় নয়! মানুষের মাথায়। কেনোনা, এখন তো আমরাই ফাগুন তৈরি করতে ব্যস্তবাগীশ হয়ে উটি। এমন ভাবে নৃত্যোৎসবে মেতে উটি যে চিন্তা বা সুচিন্তা করারই সময় পাইনা। আর এতেই তো নেতারা পার পেয়ে যান। তবে এবার সরফরাজ চিন্তা করে পেলো যে, সুচিন্তার অপর নাম তো সর্প।সর্প যেমন দংশনের পুর্বে ফোঁস ফোঁস করে উটে, তেমনি তো সুচিন্তারা ভিতরে থেকে তাঁড়া দেয় মানুষ কে। আর যাহারা তা জানতে পারে তারাই তো সর্পরাজ হয়ে উটে। আর যাহারা জানতে পারে না তারা তো সেই কবিতাপাঠ করতে করতে এমন পাগল হয়ে যান যে, পিষ্ট হয়ে যান। তবে তা রাস্তায় পড়ে নয়! মস্তিষ্কের কবলে পড়ে। 

কেনোনা, এদের যে মস্তিষ্ক ভোঁদরের মতো হয়ে," ওরে ভোঁদর সরে দাঁড়া আসছে আমার পাগলা ঘোঁড়া"। নির্বাচনও একসময় নির্বাক হয়ে চলে যাবে। সেই পথ ধরে যেই পথ নির্বাচনের দু একবছর পুর্বে খুব সুক্ষভাবে তৈরি করা হয়। যেই নির্বাচনের পালা শেষ হয়,সেই থেকে রাস্তাগুলো নষ্ট হতে শুরু হয়ে যায়। তা কি রাস্তার অভিমান নাকি বিষাক্ত প্রাণ। তা সরফরাজ বুঝতে পারে না। না পারারই কথা! কেনোনা, রাজ জানা না থাকলে কেউ রাজনীতি করতে পারে না। সে সরফরাজ হন আর সর্পরাজ হন না কেনো। তবে এবার সরফরাজ একথা তো বুঝতেই পারে যে, পাগলা ঘোঁড়া আসার ভয়ে যদি ভোঁদর সরে না দাঁড়াতো তবে ভোঁদরের কদর কমে যেতো এই রাস্তাগুলোর যে কোনো একটি তে। তবে কেনো নৃত্য করি!আমরা কি জানি না যে, আমাদের মাথায় লবন রেখে সময়ে এসে সময়ের গান গেয়ে উটে ওরা। গান শেষ হলেই কেল্লা ফতে। একমাত্রই জনগন পারে বুদ্ধি-সুবুদ্ধির সংমিশ্রণে গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ গ্রহন করতে। 

সর্পরাজের বাবা ও দাদার বয়সের সাথে তার বয়সের গড় সমষ্টি একত্রে করলে ও দেশভাগের সালে কিংবা তার কিনারায় পৌছবে কি না সর্পরাজের সন্দেহ হলো। তবে একদা নির্বাচনে যে, গাজিপুর পয়েন্টে হিন্দু-মুসলিমের দাঙ্গা সৃষ্টিকৌশল হিসেবে নির্বাচন মুখাভিনয়ের মতো শুধু অভিনয় করেছিলো তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ঐতিহ্যের ফাঁটল ধরিয়ে দিয়েছিলো শুধুমাত্র নির্বাচন। তবে তা এম পি ইলেকশনে নয়, ইউপি ইলেকশনে। আসলে চেয়ারে বসার জন্যই তো চেয়ারম্যান এমন করবেন। এটা তার গণতন্ত্রের অভিধানে পড়ে হয়তো! তবে চেয়ারপার্সন যে নিজে সেই মান্দাতার আমল থেকে বসে আছেন তা কি গণতন্ত্র নাকি গনতন্ত্রের নেকাবে  রাজ না জানা সেই রাজতন্ত্র! 

এবার সর্পরাজের মাথায় আহমদ ছফার সেই বাণীটাই যেনো মাছির মতো ভনভন শনশন করে আপন মহিমায় জেগে উটলো---
"বোবা বেদনায় আমি থরথর কেঁপে উটি।আমার ভালোবাসা প্রকাশ করব,তেমন ভাগ্য নিয়ে আমার জন্ম হয়নি। আমার একটি রেডিও ষ্টেশন নেই,একটি টেলিভিশন রীলে সেন্টার নেই।আমার একটি পত্রিকা নেই,আমার একটি দল নেই।কি করে আমার ভালোবাসার কথা প্রকাশ করব!এই সকল ভালোবাসার যন্ত্রের কোনোটাই আমার হাতে নেই। ভালোবাসার যন্ত্র ছাড়া আমি সোনার বাংলাকে ভালোবাসব কেমন করে! "

এবার সর্পরাজ কে সায়ানের মতো গলা ফাটিয়ে বলতেই হয়-- "অপরের নিন্দা করে ভাঙ্গলে কেবল গলা,নির্বাচনে আগে তোমার শতেক ছলাকলা।কখনো শান্তিপ্রীতি কখনো বিক্ষোভ,আসলে তো জানি, সবি সিংহাসনের লোভ "। 

এবার সরফরাজ ভেবে পায় না কি করবে। গগণটিলায় বসে থাকবে না বাড়ী চলে যাবে। বাড়ী যাওয়াটা ভালো হবে হয়তো! কেনোনা, যে রকম সন্ধ্যার সাঁঝবাতি শুরু হয়ে যাচ্ছে। তাতে ভয় জেগে উটলো মনে। কে জানে বাড়ী পৌছতে পারবে কি না! নাকি কোথায় ও নামটা এন্টি হয়ে যাবে চুলবুল পাণ্ডের খাতায়। দু'টানায় পড়ে গেলো সরফরাজ। কে জানে হয়তো  এক মধ্যবয়সী নারী রেললাইনে না থেকে দরাজ দিলে দরজার পানে চেয়ে আছে খোঁকা ফিরবে বলে। দু'টানায় থাকলে তো ঘরে ফিরা যাবে না। তাই সরফরাজ একমনে সিধান্ত নিলো না বাড়ীই ফিরতে হবে।

তাই সে ধীর পায়ে হেঁটে চলছে। হয়তো ধীর পায়ে হাঁটাহাঁটি করলে একটু মস্তিষ্ক রেষ্ট অনুভব করে। রেষ্ট পেয়ে মস্তিষ্ক, মস্তিষ্কচালনার শক্তি পুরোপুরি কাজে লাগালো। তাই হঠাৎএকটি কথা সরফরাজের স্বরণ হলো আর সাথে সাথেই হেসে দিলো সে আপনমনে। চিন্তা করে পায় না মানুষকে ভোলানোর জন্য নেতারা এমন কায়দা কোথায় থেকে শিখলো। আর কেমন করে ওরা মাটি ও মানুষের নেতা বা কেমনে হলেন। মাটি ও মানুষের গন্ধ তো নেতারা অনেক পুর্বে পেয়েছেন সেই মান্দাতার আমলে। অতিথি পাখির মতো সিজন শেষ হবার সাথে সাথে ওরাও যে বিজন বনে হারিয়ে গেলেন। এইতো কিছুদিন পুর্বে একাদশ বা দুইদশ আশ্চর্য্যের মতো দেখা দিলেন মুলফটকে। মুলফটক পেরিয়ে যখনি কলাগাছ মার্কায় মনোনিয়োগ পেলেন। তখনি মুলমাঠে আসতে পারলেন না! কেনোনা, এখনি তো ব্যানার, ফেষ্টুন বানানো হয় নাই। যত তাড়াতাড়ি করা যায় তত ভালোই। এসবের খরচা তো নিজে কিংবা কাছের জন দিবেন। যে কিনা পরবর্তীতে মুনাফাখোরের মতো সুদে-আসলে তুলে নিবেন। তবে নেতা এবার কাছের মানুষটার মতের সাথে নিজের মতের মতানৈক্য দেখতে পেলেন। কাছের মানুষের কথা হলো তার নাম দিতে হবে। আর নেতার কথা হলো সৌজন্যে বা প্রচারে এলাকাবাসী দিতে হবে। যাই হোক নেতার যুক্তির কাছে যেনো কাছের মানুষটা ও হার মানতে বাধ্য হলো। এবার নেতা বললেন দেখো উপকারী বন্ধু সুজন হও আর কুজন হও না কেনো একটি কথা বলি প্রচারে এলাকাবাসী দিলে লাভ আমার হবে সাথে সাথে তোমার ও। কেনোনা, আমি মসনদে আরোহন করলে তো তুমিই সব। আর এলাকাবাসী খুশি হয়ে আত্নহারা হয়ে যাবে। শুধু শব্দটা দেখার পর। আর কে আটকায় আমার বিজয়। 
মায়া হয় সেইসব এলাকাবাসীদের জন্য।যারা শুধু সৌজন্যস্বত্ব পেয়ে তুষ্ট হলো। ( তবে মায়াবীর মতো মায়া হয় না ওদের জন্য)। মায়ার সাথে সাথে করুণা করতে হয় এলাকাবাসীদের কে। হয়তো সত্যি বলেছেন কিংবা অনুমান করে বলেছেন সৈয়দ মুজতবাআলী। কে জানে কিসের জন্য বলেছিলেন যে,
"সব ব্যাপারে আজকাল স্পেশালিষ্ট। সেদিন মার্কিন মুল্লুকে এক স্পেশালিষ্ট আবিষ্কার করেন যে শোভাযাত্রা,বয়কট বা ধর্মঘটে যারা কালো ঝাণ্ডা তুলে হইহই করে, তাদের অনেকেই ভাড়াটে "।

Comments

  • No Comments
Log Out?

Are you sure you want to log out?