শোকগাথা
Read Count : 110
Category : Poems
Sub Category : N/A
# শোকগাথা **১** বেদনাগুলো লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শুকনো হাঁড় থেকে চুষে খেয়ে নিচ্ছে মানুষ বেদনার অন্তঃস্বার যেভাবে গরুর নলা থেকে খাদ্যপ্রিয় মানুষ টেনে নেয় সমস্ত মগজ। মানুষ ভীষণ অদ্ভুদ। একজন মানুষের ন্যূনতম তার লোমের সমপরিমাণ রূপ থাকে। একজন মানুষ মরে যাওয়ার পর প্রতিদিন ভোরে বাড়ির আঙিনায় এসে পায়চারি করে; তার প্রিয় কিছুর খুঁজে। আমরা দেখিনা। আমার মাও আসে। প্রতিদিন, না দেখলেও আমি অনুভব করি মা কদম রাখছে আমার হৃদয়ে। খুঁজছে সেলাই মেশিনটা যেখানে মা সেলাই করে রেখেছে দুঃখ গাথা। সেলাই মেশিনটা চুরি হয়ে গেছে কোন এক শরতের সকালে। রোদ উঠার সাথে পাল্লা দিয়ে মা হাঁটে উল্টোদিকে। স্বর্গের দরোজা খুলে হারিয়ে যায় আমার ধ্যান থেকে। খোলা উঠোনে আমার পা পরতেই মরে যায় মাটি। শুকনো পাতা উড়াউড়ি করে বাতাসে যে হাওয়া এতক্ষণ মার ছেঁড়া শাড়ীর আচলে উম নিচ্ছিলো। বয়স বাড়ার তাল করে আমরা খুয়ে দিই নিজেদের আমরা না বুঝলেও এ কথা বুঝে উঠোনের বটগাছ। তাঁর ছায়াতে এসে মা শিখিয়ে যায় প্রতিদিন সত্যকথা। আমি আমার পরম বন্ধুদের ঘৃণা করি, কারণ মায়ের মৃত্যুর দিন তারা সান্ত্বনা দিয়েছিলো আমাকে। বেঁচে থাকতে বলেছিলো। সবচেয়ে বেশী ঘৃণা করি অলৌকিকতা, যেটি আমাকে সাহায্য করেছিলো 'মার মুমূর্ষু অবস্থা বুঝতে পারার। ঘৃণা করি বাতাস, যে প্রথম প্রচার করেছিলো মায়ের মৃত্যুসংবাদ। ঘৃণা জন্মেছে উঠোনের একমাত্র বটগাছের প্রতি, মায়ের মৃত্যুর আগের দিন যার সমস্ত পাতা হলুদ হয়ে ঝড়ে পড়েছিলো। মা আমার খোদাভক্ত ছিলেন খুব। জায়নামাজে দাঁড়ালে সিক্ত হতো ঈশ্বরের শার্ট। আকাশে সিজদায় পড়তো ফিরিশতাকুল। তিনি মরে গেছেন এমনটা ভাবতে ভেঙে চুরচুর হয় হৃদয় অথচ খুব সাবলীলভাবে বলে দিচ্ছি তার তিরোধানের কথা। বন্ধন ছিঁড়ে যাবার পরো বাঁচা যায় এটা মানুষ শিখেছে মা-হারা ছেলেকে দেখে। মানুষের শোক বংশপরম্পরায় পার করে দিয়ে মানুষ মুক্ত করে নিজেকে। মায়ের পর প্রত্যেকটা মৃত্যুসংবাদ স্বাভাবিকভাবে নিতে শিখেছি বলেই আমিও মরে যাচ্ছি অতিসাবলীলভাবে।
Comments
- No Comments