সবুরে মেওয়া মিলে Read Count : 62

Category : Stories

Sub Category : Adventure

যে ধৈর্য ধারণ করে সে সফল কাম হয়। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আর ইসমাঈল, ইদরীস এবং যুলকিফ্ল প্রত্যেকেই ছিলেন আমার ধৈর্যশীল বান্দাদের অন্তুর্ভুক্ত।’ [সূরা আম্বিয়া : ৮৫]


আলোচ্য আয়াতে তিনজন মনীষীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে হযরত ইসমাঈল ও ইদরীস আ. যে নবী ও রাসূল ছিলেন তা কুরআন পাকের অনেক আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন পাকের অনেক জায়গায় তাদের আলোচনাও করা হয়েছে। তৃতীয়জন হচ্ছেন যুলকিফ্ল। তার নাম দুজন নবীর সাথে শামিল করে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং বাহ্যতঃ বোঝা যায় যে তিনিও নবী ছিলেন। কিন্তু কোন কোন বর্ণনা থেকে জানা যায় যে তিনি নবীগণের কাতারভুক্ত ছিলেন না। বরং একজন সৎকর্মপরায়ণ অলি ছিলেন। তাফসীরকারক ইবনে জারির মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত ইয়াসা আ. (যিনি নবী ছিলেন বলে কুরআনে উল্লেখ আছে) তিনি বার্ধক্যে উপনিত হলে একজনকে তার খলিফা নিযুক্ত করার ইচ্ছা করলেন, যে তার জীবদ্দশায় তার পক্ষ থেকে নবীর কর্তব্যপালন করতে পারে। এ উদ্দেশ্যে তিনি তার সব সাহাবিকে একত্রিত করে বললেন: আমি আমার খলিফা নিযুক্ত করতে চাই।

যার মধ্যে তিনটি শর্ত বিদ্যমান থাকবে তাকেই আমি খলিফা নিযুক্ত করব। শর্ত তিনটি এই-
১. সদা-সর্বদায় রোজা রাখা,
২. ইবাদতে রাত্রি জাগরণ করা এবং
৩. কোন সময় রাগান্বিত না হওয়া।

সমাবেশের মধ্যে জনৈক অজ্ঞাত ব্যক্তি উঠে দাঁড়ালো। তাকে সকলেই নিতান্ত সাধারণ লোক মনে করত। সে বলল, আমি এই কাজের জন্য প্রস্তুত আছি। হযরত ইয়াসা আ. জিজ্ঞাসা করলেন তুমি সর্বদা রোজা রাখ, ইবাদতে রাত্রি জাগরণ কর এবং কোন সময় গোসসা হওনা? লোকটি বলল নিঃসন্দেহে এই তিনটি কাজ আমার মধ্যে আছে। ইয়াসা আ. সম্ভবত তার কথা বিশ্বাস করতে পারলেন না। তাই সেই দিনকারমত তাকে ফিরিয়ে দিলেন।

দ্বিতীয় দিন আবার সমাবেশকে লক্ষ্য করে এই কথা বললেন। উপস্থিত সবাই নিশ্চুপ রইল এবং পুর্বোক্ত জনৈক অপরিচিত ব্যক্তি দাঁড়াল। হযরত ইয়াসা আ. তাকে খলিফা নিযুক্ত করার কথা ঘোষণা করলেন। যুলকিফ্ল এই পদলাভে সফল হয়েছে দেখে শয়তান তার সাঙ্গোপাঙ্গোদেরকে বলল যাও কোনরূপে এই ব্যক্তির দ্বারা এমন কাজ করিয়ে নাও, যদ্ধরুন তার এই পদ বিলুপ্ত হয়ে যাই। সাঙ্গোপাঙ্গোরা অক্ষমতা প্রকাশ করল এবং বলল, সে আমাদের বশে আসার পাত্র নয়। ইবলিস বলল, তাহলে কাজটি আমার হাতেই ছেড়ে দাও। আমি তাকে দেখে নেব।

হযরত যুলকিফ্ল স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সারা দিন রোজা রাখতেন এবং রাত্রিকালে জাগ্রত থাকতেন, শুধু দুপুরে কিছুক্ষণ নিদ্রা যেতেন। শয়তান দুপুরে ঠিক নিদ্রার সময় উপস্থিত হল এবং দরজায় কড়া নাড়া দিল। তিনি জাগ্রত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কে? উত্তর দিল আমি একজন বৃদ্ধ মযলুম্। তিনি দরজা খুলে দিলেন। ভেতরে পৌঁছে দীর্ঘ কাহিনী বলতে শুরু করল যে, আমার সাথে আমার সম্প্রদায়ের বিবাদ বা জগড়া আছে। তারা আমার এই যুলুম করেছে, সেই যুলুম করেছে। এভাবে দুপুরের নিদ্রার সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। যুলকিফ্ল বললেন, আমি যখন বাইরে যাব, তখন তুমি এসো আমি তোমার বিচার করে দিব। যুলকিফ্ল বাইরে এলেন এবং আদালত কক্ষে বসে লোকটির জন্য অপেক্ষা করলেন। কিন্তু সে আগমন করল না। পরের দিন যখন মোকাদ্দমার ফয়সালা করার জন্যে আদালতে আসলেন, তখনও এই বৃদ্ধের জন্যে অপেক্ষা করলেন কিন্তু সেদিনও তাকে আদালতে আসতে দেখা গেল না।

দুপুরের নিদ্রার জন্য যখন গৃহে গেলেন, তখন লোকটি এসে দরজায় করাঘাত করতে লাগল। তখন তিনি ঘুম থেকে উঠে জিজ্ঞাসা করলেন কে? উত্তর দিল, আমি একজন বৃদ্ধ মযলুম, তিনি দরজা খোলে দিয়ে বললেন- আমি কি তোমাকে বলিনি যে, মজলিসে বসার সময় এসো তুমি কালও আসিনি আজ সকাল থেকেও তোমাকে দেখছিনা। সে বলল, হুজুর আমার শত্র“পক্ষ খুবই ধূর্ত প্রকৃতির। আপনাকে মজলিসে বসা দেখলে তারা আমার প্রাপ্য পরিশোধ করবে বলে স্বীকার করে নেয়। আপনি যখন মজলিস ত্যাগ করেন তখন আবার অস্বীকার করে বসে। এই কথাবর্তার মধ্যে সেদিনকার দুপুরের সময়ও কেটে গেল। আর নিদ্রার সুযোগ হলনা। তিনি বাইরে এসে মজলিসে এসে বৃদ্ধের জন্য অপেক্ষা করলেন কিন্তু তার পাত্তা পাওয়া গেলনা।

তৃতীয় দিন দুপুর হলে তিনি নিদ্রায় ঢুগতে লাগলেন। গৃহে এসে পরিবারের লোকদেরকে বলে দিলেন যে কেউ যেন কড়া নাড়া না দেয়। বৃদ্ধ এ দিনও আগমন করল এবং কড়া নাড়া দিতে চাইল। সবাই নিষেধ করলে সে জানালা পথে ভিতরে প্রবেশ করল এবং দরজায় আঘাত করতে লাগল। যুলকিফ্ল জাগ্রত হয়ে দেখলেন যে ঘরের দরজা যথারীতি বন্ধ আছে, এবং বৃদ্ধ ঘরের ভিতর উপস্থিত। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি ভিতরে প্রবেশ করলে কিভাবে?

তখন যুলকিফ্ল চিনতে পারলেন যে সে শয়তান ছাড়া কেউ নয়। তিনি বললেন, তাহলে তুমি আল্লাহর দুশমন ইবলীস। সে স্বীকার করে বলল, আপনি আমার সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে দিলেন। কিছুতেই আপনি আমার জালে আবদ্ধ হননি। এখন আমি আপনাকে কোনরূপে রাগান্বিত করতে চেষ্টা করেছিলাম, যাতে ইয়াসা আ. এর সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ হয়। এ উদ্দেশ্যেই আমি আপনার সাথে এ সকল কান্ড করেছি। এই ঘটনার কারণেই তাকে যুলকিফ্ল খেতাব দেওয়া হয়। যুলকিফলের শাব্দিক অর্থ হল অঙ্গীকার ও দায়িত্ব পূর্ণকারী। হযরত যুলকিফ্ল তার অঙ্গীকার পূর্ণ করে ছিলেন। [ইবনে কাসির]

 

Comments

  • Mar 02, 2021

Log Out?

Are you sure you want to log out?