Sopner Palok Read Count : 148

Category : Blogs

Sub Category : LifeStyle
কিছুতেই শান্ত করা যাচ্ছেনা আজ নীলিমা'কে.
মাঝে মধ্যেই হাত'পা ছুড়ছে সে পরম অস্থিরতায় .. অশান্ত হয়ে আছে তার মন..
সকাল থেকে দুবার ঘুরে এসেছিলো সে বাগানের  শেষ প্রান্তে ব্যারিকেডের ধার ঘেঁষে, তবুও ওপারে দেখা পায়নি সে আসিফের ! ..
অন্য'দিনে এই সময়,মেঝেতে মুঠোবন্দি করে আনা, ধুলোর আঁকিবুকি কাটতে কাটতে চুপ'চাপ স্টিলের থালার অন্নগুলি নিঃশেষ করে ফেলে নীলিমা ..
আজ একটি দানাও দাঁতে কাটেনি সে ..
একটি মহিলা কর্মী খাওয়াতে এসেছিলো তাকে, ফল ভালো হয়নি মোটেও..
দাঁত খিচিয়ে কামড়াতে এসেছিলো তাকে নীলিমা..থালা ফেলে একছুটে পালিয়ে বেঁচেছিল  কোনোমতে ওই কর্মী ..
পরিস্থিতির সুরতাল বুঝে নিয়ে, দূর থেকে ডক্টর মজুমদার ইশারা করে বাকি কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলো,ওকে কিছুক্ষন যেন এক থাকতে দেওয়া হয়..

ওদিকে পাশের সেলে আসিফের'ও এক'ই অবস্থা..
উঠানে বসানো ফুলের টব'গুলি ছুড়ে ছুড়ে ফেলছিলো সে নির্মম'ভাবে..অথচ অন্যান্য'দিন অভ্যাস মতো অতি যত্ন সহকারে সে স্নান করাতো, সদ্য পরিণত হওয়া টবের ফুল'গাছ গুলি.
নিরাপত্তা রক্ষীরা প্রায় মারতে মারতে তাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলো চেক'আপ রুমে..
আজ ম্যাডিকাল চেক'আপ পর্ব ওদের ..তাই কোনোভাবেই মূলপর্ব সমাপ্তি না হওয়া অবধি বাগানের ওদিকটায় যেতে দেওয়া হয়নি আসিফ'কে..
ডক্টর মজুমদার পুরো ব্যাপারটা বুঝে নিয়ে বিশেষ অনুমতির মাধ্যমে চটপট সুব্যবস্থা করে দিলেন...

খোলা বাগানে ছেড়ে দেওয়া হলো নীলিমা'কে....
ওদিকে ওপ্রান্তে,আসিফ'ও রেহাই পেলো.
আঁধার মুখে,আলুথালু শাড়িতে একপা'দুপা করে ঘাস'মাটি পেড়িয়ে নীলিমা পৌছালো বাগানের সীমান্তে,ব্যারিকেডের সম্মুখে..

 ব্যারিকেডের গা'ঘেঁষে স্বমহিমায় বেড়ে উঠেছে বড় ছাতিম গাছ'খানি..মনমাতানো সুবাসে মাতাল হয়ে আছে মানসিক সংশোধনালয়ের লাঞ্ছিত পরিবেশটি.
সীমান্ত লাগোয়া একটি ছোট্ট প্রান্ত,কাঁটা'তারের বেড়াজালে ঘেরা.
উক্ত স্থানে শুকনো মুখে পৌছালো নীলিমা..
তার পাদদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছাতিমের ফুলগুলি..
বিছিয়ে থাকা শুকনো পাতা সহসা মড়মড়িয়ে উঠলো...
জুল'জুল করে নীলিমা তাকিয়ে দেখছিলো কাঁটাতারের ওপারে   .
একগুচ্ছ ছাতিমফুল দুহাতে ভরে,অবর্ণনীয় উল্লাসে এগিয়ে আসছিলো আসিফ..
নিশ্ছল হাসির ঢেউ যেন খেলা করে উঠলো নীলিমার অধরে..
বেড়ার একদম শেষ প্রান্তে এসে সেগুলি সজোরে ছুড়ে দিলো আসিফ নীলিমার সর্বাঙ্গে.
বেড়ার এইপাড়ে, হাতে তালি  দিয়ে নেচে উঠলো নীলিমা নামের পাগলিটা..
প্রাণবন্ত হাসিতে ফেটে পড়ছিলো মানসিক ভারসাম্যহীন আসিফ.
বেশ কিছুক্ষন দেখলো দুজনে দুজনকে..
উভয় চাহনি দুটি প্রকাশ করছিলো,নাজানি কত'ই না বলা কথা.
এভাবে গা'ভর্তি আনন্দ মেখে বেশ কিছুক্ষন পর,   
 হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো দুজন' দুজনকে.
প্রতিদিন এই অসামান্য ঘটনা'টি ঘটে যেত ছাতিমের কোলে..
এভাবেই মুখিয়ে থাকতো দুজন,দুজনার একচিলতে সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য.

কেটেছে কয়েক বছর...
সময়ের অবুঝ অবিনশ্বর প্রহর, এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন...
ড: মজুমদারের আকণ্ঠ প্রচেষ্টায়, নীলিমা ফিরতে পেরেছে জীবনের মূল স্রোতে..
অনেকটাই স্বাভাবিক সে এখন..
সহৃদয় ডাক্তারবাবু সমাজ'ও আইন কে সাক্ষী রেখে অবশেষে বিবাহের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন নীলিমা'কে .
এদিকে আসিফ ! সেও পুরোদস্তুর সুস্থ,
ফিরে গিয়েছে সে আত্মীয়পরিজনেদের মাঝে নিজ'গৃহে..

 কোনোএক পাতাঝরা বিকেলে..
ড:মজুমদারের কিছু জরুরি ফাইলপত্র বয়ে নিয়ে কোয়ার্টারে ফিরছিলো মিসেস নীলিমা মজুমদার..
মেন্টাল হসপিটালের পাশে কাঁচা-পাকা রাস্তাটা ধরে ফিরছিলো সে দ্রুত পদক্ষেপে..
কোনো এক কাজের সূত্রে বিপরীত দিশায়,
পা' চালিয়ে আসছিলো আসিফ..
হাওয়ায় নড়ে উঠলো ব্যারিকেড পেড়িয়ে নুইয়ে পড়া ছাতিমের একটি শাখা.
বহুবছর পর নুতন করে মাতোয়ারা হয়ে উঠলো যেন থমথমে পরিবেশ'টি.
সহসা দৃষ্টি বিনিময় হলো দুজনার !..
শিথিল হলো উভয় পদক্ষেপ....
তারপর !
কি যেন ভাবতে ভাবতে দুজনে আবার উভয়ের দৃষ্টি উপেক্ষা করে পাড়ি দিলো নিজেদের গন্তব্যে..
ফিরে দেখলোনা আর কেউ'ই..
শুধু ডুকরে কেঁদে উঠলো বোবা ছাতিম গাছ'টি..

Comments

  • No Comments
Log Out?

Are you sure you want to log out?