শেষ গানটি Read Count : 102

Category : Stories

Sub Category : Suspense/Mystery
আর্মির পুরো মেডিক্যাল টিম আজ ছমাস ধরে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। "তেজা" যার আসল নাম রামা গোপাল সিং।তাকে কোমা থেকে কোনরকমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার।
দুর্ভাগ্যবশত কোন চিকিৎসাতেই সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
দেশের ইন্টেলিজেন্স বিভাগের অনেক গুরুত্বপুর্ণ খবর তিনি জানেন।
অসীম বীরত্ব আর বিচক্ষণ বুদ্ধি মত্তার জন্য তার প্রায়ই ডাক পড়ে হেড কোয়ার্টারে।
যখনি কোন গোপন,বিপদজনক অপারেশন অথবা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করার পরিকল্পনা করা হয়,তাকে সর্বাগ্রে ডাকা হয়।
তিনি ছাড়া অপারেশন হ্যান্ডাল করার এত সাহস কেউ সহযে করে উঠেন না। সারা দেশের মান,সম্মান এমন কি সুরক্ষা পর্যন্ত তার কাঁধে তলোয়ারের মত ঝুলে থাকে ।
ব্যাপারটা মোটেও ছেলেখেলা নয়।

শত্রুপক্ষের কিছু গোপন জঙ্গি ঘাঁটি অত্যাধুনীক ড্রোনের দ্বারা লক্ষ্য করার পর,একটা গোপন সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করা ভীষণ জরুরী হয়ে পড়েছিল। দুর্গম,বিপদসংকুল বরফিলী পাহাড়।ক্যাকটাসের জঙ্গল!
..এতসব উপেক্ষা করে মাত্র পনেরো মিনিটের ব্যবধানে একদম নিশব্দে ঘাঁটিগুলো উড়িয়ে অক্ষত অবস্থায় নির্দিষ্ট জায়গায় ফিরে আসতে হবে।
ধরা পড়া চলবে না।
তার আগে নিজেকেই উড়িয়ে দিতে হবে।

তেজার কাছে নিজের দেশই তার মা,স্ত্রী,প্রেমিক এমনকি পরিবার পর্যন্ত।ওর আগে,পিছনে দেশ আর দেশপ্রেম ছাড়া কেউ নেয়।
এখনো ভারতীয় সৈন বিভাগে এরকম কিছু বীর সন্তান বেঁচে আছে বলেই দেশবাসীগণ রাতের বেলায় আলো বন্ধ করে আগামীসকালের স্বপ্ন বুকে রেখে নিশ্চিন্ত মনে শুতে পারেন।
সেই বীরপুত্রের একজন এই তেজা।

গত সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সময় জঙ্গিদের ছোড়া গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে পড়েছেন।
তবু ছাড়েননি।
সবকটা জঙ্গি ঘাঁটিকে ধূলোয় মিশিয়ে দেশের সীমারেখায় নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানেই ঢুকে পড়েছিলেন।
তারপরেই অজ্ঞান অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

মোট কুড়িটা বুলেট দেহের নানা জায়গা থেকে বের করা হয়েছিল।
ব্রেনে কিছু ব্লাড জমে যাওয়াতে অনেকগুলো নার্ভ ব্লক হয়ে পড়ে।তাই তিনি আজ ছমাস ধরে আর্মি হাসপাতালের বেডে অপলকভাবে শুয়ে আছেন।কোমা অবস্থায় ।

আমেরিকা,জাপান,ইউরোপ থেকে বিশ্ব বিখ্যাত নিউরোলওজিস্ট এসে কেস এবং কান্ডিশন ওবজার্ভ করে গেছেন।
কোন চিকিৎসাতেই সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
তাই সবাই একরকম নিরাশ হয়ে পড়েছেন।বিকল্প কিছু ভাবা হচ্ছে।
ইদানিং লন্ডনের একজন মেডিক্যাল সায়েন্টিস্ট মানুষের ব্রেনটা দেহ থেকে কেটে সচলভাবে সংরক্ষণ করার একটা গোপন তথ্য আবিস্কার করেছেন।সেটা এখনো ওপেন এনাউন্স করা হয়নি।
শুধুমাত্র কয়েকটা দেশের আর্মি মেডিক্যাল টিমকে এলার্ট করা হয়েছে।জঙ্গি কবলিত সেইসব কয়েকটা মাত্র শান্তিপ্রিয় দেশেকেই এই চিকিৎসা পদ্ধতি জানানো হবে।
ভারত তার মধ্যে একটা।
কিন্তু সবাই চাইছেন,তেজা শশরীরে ফিরে আসুক।তথ্য পাওয়াটাই জরুরী নয়।
তার মত দেশপ্রেমীকে ফিরে পেতে চান।তাই আপাতত সেই চিকিৎসায় হাত বাড়াতে চাইছেন না।
আরো কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখতে চান।

...আজ ডঃ বোস তেজার হার্ট রিডিং -এর গ্রাপিক্স চিত্রটা দেখে প্রায় লাফিয়ে উঠলেন।
মর্নিং সিক্স ও ক্লক।দু মিনিটের জন্য তার হার্ট বিট দ্রুত গতিতে ওঠা,নামা করেছিল।
সমস্ত টিমকে ডেকে পাঠান হল।
মেডিসিন,সিচিয়েশন,স্মেল এমনকি এটমেশফোর পর্যন্ত নিখুঁতভাবে পর্যালোচনা করে দেখা হল।
নতুন কিছুই নজরে পড়ল না।
একমাত্র নার্স রাধিকার নতুন ডিউটি ছাড়া।ওই সময় রাধিকা কামরার মধ্যে রিপোর্ট নিতে পাঁচ মিনিটের জন্য ঢুকে ছিল।
একদম কম বয়সী একজন সুন্দরী এবং দায়িত্বপরায়ণ নার্স।
দেরাদুনে বাড়ি।তবে কী ওর চেহারার প্রতি তেজা কোনরকম আকৃষ্ট হয়ে সাড়া দিয়েছেন?
তাকে বার,বার তেজার কামরার মধ্যে পাঠানো হল।
নানা রকমভাবে।হাসি,কান্না,রাগ,শোক।সব রকম অনুভূতি দিয়ে যাচাই করার পরও কিছু ধরা পড়ল না।

এমন সময় রাধিকার লুকোনো মোবাইলটা বেজে উঠল।একদম হাল্কা শব্দে।
কনফারেন্স হলের নিঃস্তব্ধতার জন্যই টোনটা অনেকেই শুনতে পেলেন।
মুহূর্তের মধ্যে রাধিকার মুখটা সংকুচিত হয়ে গেল। নিয়মভঙ্গের অপরাধে মোবাইলটা সাথে,সাথেই অফ করে মুখটা নিচের দিকে ঝুকিয়ে রাখল।
আর্মিতে একটা ভুল মানে রেস্টিকেট।সে খুব ভাল করেই জানে।আসলে কম বয়সি।তার উপর উড বীর আব্দার।
দুই মিলে সে এই অপরাধটুকু গোপনে করে বসত।
মোবাইলটা নিয়েই ডিউটে আওয়ারে ঘুরে বেড়ায়।


ডঃ বোস উৎসাহিত হয়ে ইংরেজিতে বলে উঠলেন,রাধিকা টোনটা ভলিউম হাই করে বাজাও।
রাধিকা ভয়ে,ভয়ে তাই করল।
"...যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে 
...তবে একলা চলো রে.."
রবীন্দ্র সংগীতের ইংলিস ভার্সন।

ডঃ বোস মোবাইলটা হাতে নিয়ে বললেন,তুমি যখন তেজার রিপোর্ট আনতে ওর কামরায় প্রবেশ করেছিলে।ফোনটা কি একবারও বেজেছিল?
রাধিকা অপরাধির সুরে বলে উঠল,ইয়েশ স্যার।
ডঃ বোস এবার প্রায় নেচে উঠলেন।
তিনি আবার রাধিকাকে টিউন চালু অবস্থায় তেজার কামরায় পাঠালেন।
....ইজ আ মিরাক্যাল।
ডঃ বোস চেঁচিয়ে উঠলেন।
তেজার ফিজিক্যাল ফাংশনে গতিশীলতা জেগে উঠল।
কবার চোখের পলকও পড়ল।

সাথে,সাথে ডঃ বোস বলে উঠলেন,তেজাকে ইমিডিয়েট শান্তিনিকতনে নিয়ে যেতে হবে।
ওর চিকিৎসা একমাত্র রবিঠাকুর।
কোন ঔষুধই কাজে লাগবে না।

খোঁজ করে জানা গেল তেজা ছাত্র জীবনে রবীন্দ্র সংগীতের একজন ভাল রকম শ্রোতা এবং গায়কও ছিল।
     -----সমাপ্ত---

Comments

  • No Comments
Log Out?

Are you sure you want to log out?